সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

ভারতে হিজাব বিতর্ক: কর্নাটকের মুসকান খান বিবিসিকে যা বললেন| India Karnataka hijab row | Newspin | Online bangla news

৮ এই ফেব্রুয়ারী ভারতের কর্নাটকে মুসকান খান এর “আল্লাহু আকবার” তাকবির পুরো দুনিয়া শুনেছে। ভারতের বর্তমান মোদী সরকারের অধীনে কিছু কট্টর হিন্দু চরমপন্থী কর্ণাটকের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীদের হিজাব পরে স্কুল এ যেতে বাধা দেয়। ঠিক এরকম বাধার শিকার হন মুস্কান খান।



তারপর হিন্দু চরমপন্থীরা মুসকানের দিকে এগিয়ে এসে,

“জয় শ্রী রাম “, “হিজাব খুলো” এসব বলতে থাকে।

একপর্যায়ে মুসকান ও জোরে জোরে “আল্লাহু আকবার” বলে তাকবীর দিতে থাকে।

আর এই দৃশ্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন অনেক জন যা পরে ইন্টারনেট এ ভাইরাল হয়ে যায়।

এমন কি এ ঘটনার পরে ফেইসবুক এ ৭০% পোস্ট  “আল্লাহু আকবার “ দিয়ে হয়। আল্লাহু আকবার। 



ভারতে হিজাব বিতর্ক: কর্নাটকের মুসকান খান বিবিসিকে যা বললেন| India Karnataka hijab row | Newspin | Online bangla news




মুসকান খান কে নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে মুসকান খান যা যা বলেন তা হলো  - 



মুসকান খান: আমি যখন আল্লাহর নাম নেই, তখন মনে সাহস পাই।তাদের মধ্যে কোনো মনুষত্ব ছিল না। তারা বলছিলো, “জয় শ্রী রাম”, “চলে যাও”, বোরখা খুলো” এরকম স্লোগান দিচ্ছিলো তারা। 





বিবিসি প্রতিবেদক: সেদিন কলেজে যা হচ্ছিল আপনি জানতেন  এ ব্যাপারে ?


মুসকান খান: না, আমি আগে থেকে কিছু জানতাম না। আমি সবসময় যেভাবে কলেজে যাই সেভাবেই  যাচ্ছিলাম।ওখানে বাইরে গ্রুপ এভাবে ছিল , তারা বলছিল যে, “ বোরখা পড়ে কলেজে যাওয়া যাবে না। যদি কলেজে যেতে হয় তাহলে বোরখা এবং হিজাব খুলে যেতে হবে। আর যদি তুমি বোরখা পড়ে থাকতে চাও,  তাহলে বাড়ি চলে যাও। ”


এরপর আমি কলেজের ভিতরে চলে আসলাম,  এবং ভাবলাম করা যায় ভিতরে চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে এত স্লোগান চলছিল। ওই দলের সবাই “বোরখা খুলে ফেলো”, “বোরখা খুলে ফেলো”, “জয় শ্রী রাম” এরকম কিছু বলছিলো তখন আমি আওয়াজ তুলি ব্যাস… ।





বিবিসি প্রতিবেদক: তারপর কি হলো?


মুসকান খান: আমি ভেবেছি না আমি ক্লাসে যাবে এরকম বলে, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এরকম করে অনুসরণ করেছিল যে তারা আমাকে আক্রমণ করতে চায়।তারা ছিল অন্তত 40 জন আমি ছিলাম একা। তাদের মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব ছিল না হঠাৎ করে এসে আমার সামনে চিৎকার করতে থাকল। তাদের হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ট আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ট দুলাতে লাগল এবং বলতে  লাগলো,  “জয় শ্রী রাম”, “চলে যাও”, বোরখা খুলো”






বিবিসি প্রতিবেদক:আপনি কতদিন ধরে হিজাব পরেন? কলেজে কোন সমস্যা ছিল আগে?



মুসকান খান: কলেজে কোন সমস্যা হয়নি কখনো,  সবকিছু আগের মতোই ছিল। তুমি হিজাব পড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। আমি বোরখা পরি না শুধু হিজাব পরি।  চুল আড়াল করে  ক্লাসে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এই লোকগুলো সেদিন আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছিলো না। তাদের অনেকে ছিল বহিরাগত,  এবং  কলেজের ছাত্র ছিল কম।  তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত ছিল। 





বিবিসি প্রতিবেদক: তারা কি বলছিলো?


মুসকান খান: তারা বলছিল বোরখা খুলে ফেলো।  না হলে কলেজে যেতে পারবে না। তাই সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলো। আমার আগে চারজন মেয়ে এসেছিল।  তাদেরকে গেইটেই আটকে ফেলেছিল।  গেট তালাবদ্ধ ছিল। প্রিন্সিপাল আমাদের সাথে ছিল।  প্রিন্সিপাল,  শিক্ষক সবাই আমাদের  সমর্থনে  ছিল। সেখানে আমাকে রক্ষা করেছে সবাই। ওই মেয়েদের সাথে ছেলেরা এরকম করছিল,  তারা তাকাতে ভিতরে চলে গেলো। তারপর আমার সাথে একই কাজ করলো।  আমি কাঁদিনি,  আওয়াজ তুলেছি। 





বিবিসি প্রতিবেদক:  আপনি কি বললেন?



মুসকান খান: আমি বললাম আল্লাহু আকবর।  কারণ আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম  নিই,  আল্লাহর নাম মিলি আমার সাহস বেড়ে যায়। 





বিবিসি প্রতিবেদক:  হিজাব  সম্পর্কে  আপনার  মতামত  কি?  কলেজ যদি বলে হিজাব পরতে পারবেন না?



মুসকান খান: কলেজে আমাদের প্রিন্সিপাল নিজেই বলেছে,  তুমি হিজাব  কলেজে আসতে পারো। এখনই বাইরের লোক গুলো এসে এরকম তামাশা শুরু করেছে। প্রিন্সিপাল নিজেই বলেছেন  আগে তোমরা যেভাবে আসছে,  সেভাবে  আসো।  কোন সমস্যা নেই। 






 বিবিসি প্রতিবেদক:  আপনার কি মনে হয় হিজাব পরা উচিত?



 মুসকান খান:  হ্যাঁ,  অবশ্যই  পড়া উচিত। 






বিবিসি প্রতিবেদক:  এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?



মুসকান খান:  ভারতের সংবিধানে আমার বিশ্বাস আছে যে হিজাবের বিপক্ষে এরকম কিছু আসবে না।  ইনশাল্লাহ,  আমরা হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি।





বিবিসি প্রতিবেদক:  এই মুহূর্তে যে হিজাব বনাম গেরুয়া বিতর্ক চলছে তা কি অন্যান্য ছাত্র দের সাথে আপনার সম্পর্ক কে প্রভাবিত করবে?



মুসকান খান:  স্যার দেখেন,  আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোন জাত নিয়ে কিছু বলছি না।  আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য,  আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছে। আমরা হিজাব পরছি বলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে,  কলেজে আমাদেরকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।  আমরাতো বছরের পর বছর ধরে এটা পড়ছি।  কিন্তু এই লোক গুলো এখন এমনভাবে বলছে যে তুমি যদি এটা পড়ে আসো,  তাহলে আমরা এটা পড়ে আসবো।  ছেলেরা আমার কলেজের প্রিন্সিপাল কে বলছে,  সে যদি বোরকা পরে আসে তাহলে আমরাও এসব সরাবো না…  আমাদের কোন সমস্যা নেই।  তারা যেকোন ভাবে আসতে পারে।  আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার,  ব্যাস।.. যেভাবেই তার আসুক না কেন,  তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই।  আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের প্রিন্সিপাল আমাদের সঙ্গে আছেন,  শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন।  বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল তামাশা করছে। 





বিবিসি প্রতিবেদক:  কালকে যদি হাইকোর্ট বলে আপনি পড়তে পারবেন না হিজাব?


মুসকান খান:  বলবেনা  স্যার,  ভারতের সংবিধান কোন ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে না -  এই আচ্ছা আমাদের আছে। 





বিবিসি প্রতিবেদক:  সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে নিয়ে আলোচনা চলছে,  অনেক প্রশংসা করেছেন কি বলবেন এ নিয়ে?



মুসকান খান: সভায় অনেক ভালবাসা দিচ্ছেন,  অনেক সাহস দিচ্ছেন -  অনেক অনেক শুকরিয়া।  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ